সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জের আলোচিত তাহিরপুর সীমান্তে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ১২ ঘণ্টায় কয়েক কোটি টাকার বিভিন্ন মালামাল পাচারের খবর পাওয়া গেছে। কিন্তু বিজিবির পক্ষ থেকে অবৈধ মালামাল আটকের কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি। এই সীমান্ত দিয়ে কয়লা, মাদকদ্রব্য ও অস্ত্রপাচার করতে গিয়ে বিএসএফের গুলিতে, তাড়া খেয়ে নদীতে ডুবে ও গর্তে পড়ে এপর্যন্ত শতাধিক লোকের মৃত্যু হয়েছে।
তারপরও চিহ্নিত চোরাকারবারিদের গ্রেফতারের জন্য কোন পদক্ষেপ নেয়া হয় না। তাই সেনা বাহিনীর সহযোগিতা জরুরি প্রয়োজন।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার রাত ১০টার থেকে জেলার তাহিরপুর উপজেলার চাঁনপুর সীমান্তের ১২০২ নং পিলার সংলগ্ন পর্যটন স্পট বারেকটিলা, আনন্দপুর, গড়ইগড়া এলাকা দিয়ে একাধিক চোরাচালান মামলার আসামি শাহিবুর মিয়া, ফকর উদ্দিন, শফিকুল মিয়া, তোতা মিয়া, ভোটকুন মিয়া, রফিক, নিজাম মিয়া, সাইকুল মিয়া, সোলেমান মিয়া, জামাল মিয়া ও তোতলা আজাদগং,পাশের লাউড়গড় সীমান্তের যাদুকাটা নদী, শাহ আরেফিন মোকাম ও দশঘর এলাকা দিয়ে চোরাকারবারি বায়েজিদ, জসিম, নুরু মিয়া, জজ মিয়া, রফিক মিয়াগং পৃথকভাবে ভারত থেকে ঠেলাগাড়ি ও নৌকা বোঝাই করে অবৈধভাবে চিনি, পেঁয়াজ, ফুছকা, নাসির উদ্দিন বিড়ি ও মদ-গাঁজা, ইয়াবা, কয়লা ও পাথর পাচার শুরু করে। একই সময়ে চারাগাঁও সীমান্তে চোরাচালান মামলার আসামি রফ মিয়া, আইনাল মিয়া, সাইফুল মিয়া, দীপক মিয়া, বাবুল মিয়া, সাইকুল মিয়া, শফিকুল ইসলাম ভৈরব, রুবেল মিয়া, সোহেল মিয়া, আনোয়ার হোসেন বাবলু, শারাফত আলীগং,পাশের বালিয়াঘাট সীমান্তে ইয়াবা কালাম, হোসেন আলী, রতন মহলদার, জিয়াউর রহমান জিয়া,মনির মিয়া, কামরুল মিয়াগং, টেকেরঘাট সীমান্তে রহিছ মিয়া, আক্কল আলী, রুবেল মিয়া, মোহাম্মদ আলী, রফিকুল মিয়াগং ও বীরেন্দ্রনগর সীমান্তে লেংড়া জামাল, শেখ মস্তোফাগং পৃথকভাবে ভারত থেকে অবৈধভাবে কয়লা, পাথর, চিনি, পেঁয়াজ, সুপারি, মদ ও বালি পাচার করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
গত শনিবার দুপুর ১টা পর্যন্ত পাচারকৃত অবৈধ মালামাল অটোরিকশা বোঝাই করে বাদাঘাট, লাউড়গড়, কলাগাঁও, বাগলী বাজারে অবস্থিত চোরাকারবারিদের দোকানপাটসহ শিমুলতলা ও কামড়াবন্দ গ্রামের বিভিন্ন বসতবাড়িতে নিয়ে মজুত করে। সেই সাথে পাচারকৃত কয়লা ইঞ্জিনের নৌকা বোঝাই করে নেত্রকোনা জেলার কলমাকন্দা নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু বিজিবির পক্ষ থেকে কোন পদক্ষেপ নেয়ার খবর পাওয়া যায়নি। তবে চাঁনপুর ক্যাম্পে সুবেদার আব্বাস, চারাগাঁও ক্যাম্পে সুবেদার শফিকুল ও টেকেরঘাট ক্যাম্পে সুবেদার ওবায়দুর যোগদানের পর থেকে সীমান্তে চোরাচালান ও চাঁদাবাজি বেড়েছে বলে জানা গেছে।
এব্যাপারে চাঁনপুর সীমান্তের কড়ইগড়া গ্রামের বাসিন্দা ও উত্তর বড়দল ইউপি মেম্বার কফিল উদ্দিন বলেন, বিজিবির নামে প্রতি বস্তা চিনি ও পেঁয়াজ থেকে ১শ টাকা, প্রতিবস্তা ফুছকা থেকে ১৫০ টাকাসহ মাদক ও বিড়ি থেকে চাঁদা নিয়ে গত ১২ ঘণ্টায় ভারত থেকে অবৈধভাবে কমপক্ষে ৩০ লাখ টাকার মালামাল পাচার করেছে সংঘবদ্ধ চোরাকারবারিরা। এছাড়া ৪শ বস্তা রসুন তারা ভারতে পাচার করেছে। কিন্তু বিজিবিকে বারবার জানানোর পরও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
চাঁনপুর গ্রামের বাসিন্দা আবু বক্কর বলেন, ভারত থেকে অবৈধভাবে মালামাল পাচারের সময় ক্যাম্পের ভিআইপি মতিয়ার সৈনিকদের সেখানে উপস্থিত ছিল। কিন্তু অবৈধ মালামাল আটক করেনি। সুনামগঞ্জ জেলার সিনিয়র সাংবাদিক মোজাম্মেল আলম বলেন, রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে অবৈধভাবে বিভিন্ন মালামাল পাচারের ব্যাপারে ক্যাম্প কমান্ডারদের বারবার জানানোর পরও তারা কোনো পদক্ষেপ নেয় না।
